মা হোয়াইট গল্প বাংলা: বহু বছর আগে বহুদূরের এক রাজ্যে একটি ছােট্ট রাজকন্যা জন্মেছিল, তার চুল ছিল রাতের অন্ধকারের মতন কালাে, চামড়া ছিল বরফের মতন সাদা এবং ঠোট দুটি ছিল রুপির মতন লাল। সে স্নাে হােয়াইট নামে পরিচিত ছিল। সে যখন তার শৈশব কাটিয়ে কৈশােরের দিকে পা দিল তখন সে দিনে দিনে আরও সুন্দরী হয়ে উঠছিল। তার সৎ মা, এই রাজ্যের রাণী সেও খুব সুন্দরী ছিল। রাণীর তার নিজের রূপ নিয়ে খুবই অহঙ্কার ছিল এবং সে একটা মায়াবী আয়না তৈরী করেছিল। প্রতিদিন সে আয়নার দিকে দেখত আর জিজ্ঞাসা করত ?
মা হোয়াইট গল্প বাংলা
বহু বছর আগে বহুদূরের এক রাজ্যে একটি ছােট্ট রাজকন্যা জন্মেছিল, তার চুল ছিল রাতের অন্ধকারের মতন কালাে, চামড়া ছিল বরফের মতন সাদা এবং ঠোট দুটি ছিল রুপির মতন লাল। সে স্নাে হােয়াইট নামে পরিচিত ছিল।
সে যখন তার শৈশব কাটিয়ে কৈশােরের দিকে পা দিল তখন সে দিনে দিনে আরও সুন্দরী হয়ে উঠছিল। তার সৎ মা, এই রাজ্যের রাণী সেও খুব সুন্দরী ছিল। রাণীর তার নিজের রূপ নিয়ে খুবই অহঙ্কার ছিল এবং সে একটা মায়াবী আয়না তৈরী করেছিল। প্রতিদিন সে আয়নার দিকে দেখত আর জিজ্ঞাসা করত ?
আয়না, দেওয়ালের আয়না, এই রাজ্যের সেরা সুন্দরী কে? আয়নাটি উত্তর দিত রানী তুমিই এই রাজ্যের সেরা সুন্দরী।
এবং রাণী খুবই সন্তুষ্ট হােতেন কারণ তিনি জানতে এটা একেবারেই সত্যি কথা। . স্নাে হােয়াইট ধীরে ধীরে যুবতী হয়ে ওঠে এবং তারপর অহঙ্কারী রাণী একদিন তার আয়নাকে জিজ্ঞাসা করে
‘আয়না দেওয়ালের আয়না, এই রাজ্যের সেরা সুন্দরী কে? তখন আয়নাটি বলে ‘রাণী তুমি এখনও খুবই সুন্দর কিন্তু স্নাে হােয়াইট এখন তােমার থেকেও সুন্দরী।
একথা শুনে রাণী খুবই রােগ যায় কারণ সে তার থেকে সুন্দরী কাউকে সহ্য করতে পারে না। সেই সময় থেকেই রাণী স্নাে হােয়াইটের প্রতি বিরক্ত হতে শুরু করে। যদি সুন্দরী রাজকন্যা আর বেশীদিন না থাকে, মাথায় এই বুদ্ধি এনে রাণী এক শিকারীকে ডেকে পাঠায় এবং স্নাে হােয়াইটকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়।
শিকারীটি তার নিজের জীবন সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে পড়ে, সে মেয়েটিকে নিয়ে গভীর অরণ্যে যায় কিন্তু তাকে খুন করতে পারে না। তাই সে স্নাে হােয়াইটকে একা রেখে চলে আসে।
স্নাে হােয়াইট এক গভীর অরণ্যের মধ্যে নিজেকে একী আবিষ্কার করে। চতুর্দিকে থেকে রহস্যজনক আওয়াজ আসছিল এবং বড় বড় ছায়া মূর্তি দেখে সে খুবই ভয় পেয়েছিল। সে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে দৌড়াতে শুরু করে। জঙ্গলে দৌড়াবার সময় তার কালাে ঘন চুল গাছের শাখার সাথে জড়িয়ে যায়। বহু জন্তু জানােয়ার তাকে দেখতে পেয়েছিল কিন্তু কেউ তার কোন ক্ষতি করেনি।
সে যত দ্রুত সম্ভব দৌড়ানাের চেষ্টা করছিল, হঠাৎ করে একটা লাল রঙের ছাল বিশিষ্ট্য ছােট্ট বাড়ীর দিকে তার নজর যায়। সে বাড়ির দরজা ধাক্কাতে থাকে কিন্তু কোন সাড়া পায়না তাই সে নিজে থেকেই ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে।
সেখানে সে দেখে একটা ছােট্ট টেবিলে সাতটা থালা রয়েছে এবং দেওয়ালের সাথে লাগয়া সারিবদ্ধ সাতটি খাট। ক্ষুধার্ত রাজকন্যা সাতটা থালা থেকেই খুঁটে খুঁটে খাবার খায় এবং তারপর সে সপ্তম খাটের উপর শুয়ে পড়ে। | সাতটি বামন ছিল এই বাড়ির মালিক। কিছুক্ষণ বাদে তারা সােনা এবং তামার খনির কাজ সেরে বাড়ি ফিরে আসে। তারা এই সুন্দরী স্নাে হােয়াইটকে তাদের ঘরে শুয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হয়ে যায়।
তারা সকাল পর্যন্ত সুন্দরী রাজকন্যাকে ঘুমাতে দেয় এবং তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করে যে এই গভীর অরণ্যে অবস্থিত এই বাড়ির সন্ধান যে পেল কি করে। স্নাে হােয়াইটের গল্প শুনে তারা খুবই দুঃখ পায় এবং তাকে সেখানে থাকার অনুমতি দেয়। সে এই বামন এবং তাদের বাড়ি দেখা শােনা করত বিনিময়ে তারা তাকে খাদ্য বন্ধুত্ব এবং আশ্রয় দিয়েছিল।
স্নাে হােয়াইট এই বামনদের সাথে বেশ সুখেই বসবাস করছিল। কিন্তু একদিন দুষ্ট রাণী প্রাসাদে ফিরে আসে আর আয়নাকে জিজ্ঞাসা করে
‘আয়না, দেওয়ালের আয়না এই রাজ্যের সেরা সুন্দরী কে? উত্তরে আয়না বলে
রাণী তুমি এখনও খুবই সুন্দর কিন্তু স্নাে হােয়াইট এখন তােমার থেকেও সুন্দরী।
তখন রাণী বুঝতে পারে যে স্নাে হােয়াইট এখনও বেঁচে আছে। সে এই মেয়েকে মেরে ফেলবে বলে স্থির করে। রাণী নিজেকে কুৎসিত মহিলার ছদ্মবেশে আড়াল করে নেয় এবং তারপর এই বামনদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। সে চিৎকার করতে থাকে - ‘বেল্ট বিক্রি আছাে গাের খুব সুন্দর সুন্দর বেল্ট বিক্রি আছে।
স্নাে হােয়াইট মনে করে দরজা খুললে ভয়ের কিছু নেই। স্নাে হােয়াইট একটা সুন্দর রেশমী বেল্ট দেখতে থাকে, রাণী তার গলায় বেল্ট দিয়ে এমন ভাবে ফাঁস লাগিয়ে দেয় যে তার দম বন্ধ হয়ে আসে এবং সে মৃতের মতন মাটিতে পড়ে যায়।
বামনরা বাড়ি ফিরে দেখে স্নাে হােয়াইট মাটিতে পড়ে আছে। তারা লক্ষ্য করে যে বেল্টটা খুবই দৃঢ়ভাবে আটকে আছে তা একটা ছুরি দিয়ে বেল্টটা কেটে ফেলে। সে পুনরায় শ্বাস নিতে পারে এবং সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে তাদের জানায়।
বামনরা বুঝতে পারে যে এই বৃদ্ধ মহিলা ছিল আসলে দুষ্টু রাণী তারা তাকে সাবধান করে দেয়। তারপর থেকে সে আর কাউর জন্যই দরজা খুলত না।
কিছুদিন বাদে বাণী প্রাসাদে এসে তার আয়নাকে জিজ্ঞাসা করে ‘আয়না দেওয়ালে আয়না, এই রাজ্যের সেরা সুন্দরী কে?
যখন সে জানতে পারে যে এখনও স্নাে হােয়াইট সবচেয়ে বেশী সুন্দরী তখন রাণী প্রচণ্ড রেগে যায় এবং স্নাে হােয়াইটকে মেরে ফেলার জন্য শপথ নেয়।
এই সময় সে স্নাে হােয়াইটের কাছে সুন্দর সুন্দর চিরুনি বিক্রি করতে আসে, সে জানলা দিয়েই চিরুনি কেনে এবং তা দিয়ে চুল আঁচড়ায়, সে যেখানে বসেছিল সেখানেই পড়ে যায় কারণ চিরুণিগুলি ছিল বিষাক্ত।
একটু বাদেই বামনরা বাড়ি ফিরে আসে। তারা বুঝতে পারে যে চিরুনিটিতে বিষ দেওয়া ছিল এবং তারা স্নাে হােয়াইট কে বাঁচাবার জন্য অতি দ্রুত তা সরিয়ে ফেলে। প্রাসাদে ফিরে রাণী পুনরায় আয়নার কাছে যায় আর জিজ্ঞাসা করে।
‘আয়না, দেওয়ালে আয়না, এ রাজ্যের সেরা সুন্দরী কে?
যখন সে বুঝতে পারে যে রাজকন্যা এখনও বেঁচে আছে তখন সে একটা প্রকৃত বিষাক্ত আপেল তৈরি করার জন্য তার সমস্ত জাদু বিদ্যার প্রয়ােগ করে ফেলে।
তারপর রানী বৃদ্ধার সাজে সাজে এবং আবার একবার স্নাে হােয়াইটের কাছে পৌছায়। সে স্নাে হােয়াইটকে আপেল দিতে চায় কিন্তু স্নাে হােয়াইট তা নিতে রাজী হয় না। এই মায়াবী আপেলটা এতই আকর্ষণীয় ছিল যে। যে দেখবে তারই খেতে ইচ্ছা করবে। স্নাে হােয়াইট আপেলটি কামরায় এবং সঙ্গে সঙ্গে যে মৃতের মতন পড়ে যায়।
রাণী প্রাসাদে এলে তার আয়না শেষবারের মতন তাকে বলে রাণী, তুমিই এই রাজ্যের সেরা সুন্দরী।
বামনরা কিছুতেই স্নাে হােয়াইটকে জাগতে পারল না কিন্তু সে যেমন স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর ছিল তেমনই রয়ে গেল, তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে সে যেন নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে। তারা সর্বদা তাকে দেখার জন্য তাকে একটা কাচের বাক্সের মধ্যে রেখে দেয়।
একদিন এক রাজপুত্র এই জঙ্গলে শিকার করতে আসে। সে কাঁচের বাক্সে শােয়া। স্নাে হােয়াইটের কাছে এসে উপস্থিত হয় এবং তাকে দেখার সাথে সাথে তার মনে হয় যে তার মতন সুন্দরী রাজকন্যা সে আগে কখনও দেখেনি। সে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ভালােবেসে ফেলে। কাচের বাক্সটি দেখে তার মমনে হয় যে নিশ্চয় এর মধ্যে কোন খারাপ মায়াবী শক্তি আছে। সুতরাং সে বাক্সটা খুলে স্নাে হােয়াইটকে তার কালে তুলে নেয়।
রাজপুত্র স্নাে হােয়াইটকে কোল তােলার সাথে সাথে বিষাক্ত আপেলটা তার মুখ থেকে পড়ে যায় এবং তার ঘুম ভেঙে যায়। স্নাে হােয়াইট ধীরে ধীরে তার চোখ খােলে এবং নিজেকে রাজপুত্রের কোলে আবিষ্কার করে।
স্নাে হােয়াইট বেঁচে আছে জেনে বামনগুলি আনন্দে নেচে ওঠে এবং রাজপুত্রকে বিয়ের ব্যাপারটা সহজেই মেনে নেয়।
এদিকে রাণী তার নিজের ঘৃণায় জন্যই কুৎসিত হয়ে ওঠে এবং এই কারণে সে আর কোন দিনই তার আয়নার দিকে চেয়ে দেখেনি। অবশেষে সে প্রচণ্ড রাগে তার আয়নাটি ভেঙে চুর্ণ বিচূর্ণ করে দেয় এবং সেই কারণে সে স্নাে হােয়াইটের সুখ সম্পর্কে তার কিছুই জানতে পারে না।
COMMENTS